পাইলস বা অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক
পাইলস বা অর্শ্ব রোগ নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিক ওষধের প্রয়োগ সংকেত নিয়ে আজকের আলোচনা, লিখেছেন - ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ। যে সকল কারণে মলদ্বারের নিকটবর্তী শিরা সমূহে রক্ত চলা-চলের গতিরোধ হয়ে রক্ত সঞ্চিতির ফলে স্ফীতি এবং বড় হয় তাকে পাইলস বা অর্শ বলে। কখনও একটা কখনও বা একাদিক থোকা থোকা আঙ্গুরের ন্যায় দেখতে পাওয়া যায়। অর্শের বলি মলদ্বারের বাইরে থাকলে তাকে বর্হিবলি এবং অভ্যন্তরে থাকলে তাকে অন্তর্বলি বলে।
মানুষের রোগব্যাধির মধ্যে মলদ্বারের রোগই সবচেয়ে বেশি স্বচিকিৎসা এবং হাতুড়ে চিকিৎসা হয়। কিছুটা ভয় ও বিব্রতকর অনুভূতির জন্য এ জাতীয় রোগ হলে রোগীরা ডাক্তার দেখাতে চায় না। রোগীরা নিজে নিজে অথবা সস্তায় পাওয়া হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যান বেশি। বিভিন্ন কুসংস্কার এবং মলদ্বারের সব রোগই পাইলস এ ভ্রান্ত ধারনার কারনে চিকিৎসকের কাছে
যেতে দেরি করেন,যা কখনো কখনো ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনে।
পাইলসের প্রকারভেদ
:-
বলিভেদে পাইলস দুই প্রকার। যথা- বহির্বলি ও অন্তর্বলি। আবার স্রাব সম্বন্ধীয় পাইলস বা অর্শকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
বলিভেদে পাইলস দুই প্রকার। যথা- বহির্বলি ও অন্তর্বলি। আবার স্রাব সম্বন্ধীয় পাইলস বা অর্শকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
- যে অর্শ থেকে প্রবল রক্ত ধারা ছুটে তাকে রক্তস্রাবী পাইলস বলে।
- যে অর্শে রক্ত স্রাব থাকে না কিন্তু জ্বালা যন্ত্রনা, সুঁচ ফোটান ব্যথা ইত্যাদি কষ্টদায়ক উপসংগ থাকে তাকে অস্রাবী পাইলস বলে।
- যে অর্শে কেবল মাত্র আম নির্গত হয় তাকে আম শ্রাবী পাইলস বলে যা বর্ষাকালেও বসন্তকালে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
যে রোগীরা পাইলসে ভোগেন তাদের সাধারনত কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা থাকে। অনেক রোগী আছেন যাদের পেটে গ্যাস হয়। পায়খানার সঙ্গে মিউকাস বা আম যায়। পায়খানা করার পর মনে হয় ক্লিয়ার হয়নি। দুধ, পোলাও, ঝাল, গরু বা খাসির মাংস ইত্যাদি খেলে হজমে গোলমাল হয়। টয়লেটে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। অনেকে মলদ্বারের ভেতর আঙুল দিয়ে মলত্যাগ করেন। রোগীরা এ সমস্যাগুলোকে গ্যাস্ট্রিক বা ক্রনিক আমাশয় হিসেবে মনে করেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে আমরা বলি ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ডোম বা আইবিএস। এ জাতীয় রোগীদের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, পোলাও, ঝাল, বিরিয়ানি খাওয়া নিষেধ।
পাইলসের উৎপত্তি :-
কোষ্ঠবদ্ধতা, উৎকট উদরাময়, যকৃতের বিবৃদ্ধি, অতিরিক্ত মদ্য কিংবা মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার, অলস জীবন যাপন, স্ত্রীলোকের জরায়ুর বিবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বস্তি গহ্বরের শিরা সকলে চাপা পড়ে। ফলে রক্তের গতিরুদ্ধ হওয়ার কারণে মলদ্বারে নিকটবর্তী শিরা সকল রক্ত সঞ্চিত হয়ে স্ফীত হয়। এভাবে অর্শের জন্ম হয়। মোট কথা বস্তি গহ্বরের শৈরিক রক্তস্রোত বাধা প্রাপ্ত হলেই পাইলস বা অর্শের উৎপত্তি ঘটে।
এই রোগের লক্ষনাদি
:-
মলের সঙ্গে রক্তের ছিটে দেখা যায় অথবা সময় সময় এক বারকার পাইখানাতেই প্রায় এক ছটাক হতে আধ পোয়া পর্যন্ত রক্ত বাহির হয়। মল ত্যাগকালে রোগী বিষম কষ্ট পান এবং সরলাস্ত্র মধ্যে জ্বালা, দপ্দপানি ও চিড়িক মারা মতন যাতনা ভোগ করেন এবং সময় বিশেষে মল নির্গত হয়ে যাবার পরও অনেকক্ষন পর্যন্ত উক্ত যাতনাদি অবস্থান করে। যখন অর্শের বলীগুলো প্রদাহিত হয় অথবা গুহ্যদ্বারের পেশী বা স্ফিংটার দ্বারা নিষ্পেষিত হয়, তখন অতিশয় ক্লেশ বোধ হতে থাকে এবং উপর্যুপরি দুই তিন দিন পর্যন্ত রোগী বিছানা হতে উঠে কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। প্রায় সকল সময়েই অর্শ্বরোগের সাথীরূপে কোষ্টবদ্ধতা প্রকাশ পায়। এই রোগ কতকটা পূর্বোক্ত "মেক্যানিক্যাল অবষ্ট্রাকসান" এবং কতকটা মলত্যাগকালীন যন্ত্রনা জন্য আনীত হয়। অর্শরোগ নিবন্ধন, আলস্য বোধ, রুক্ষ্ম মেজাজ, শিরপীড়া, মূর্চ্ছাভাব এবং পরবর্তী অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তস্রাবহেতু রক্তাল্পতা ও মাথা ঘোরা, উপসর্গ রূপ দেখা দেয়।
খাদ্যাভাসের পরিবর্তন :-
আমরা প্রচুর রোগী পাই। যাদের সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবে পায়ুপথের বিভিন্ন রোগ হয়। পায়খানার পরিমান বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- শাক, সবজি,সালাদ, ফল, ইসুপগুলের ভূষি, গমের ভূষি ইত্যাদি। দৈনিক পরিমিত পানীয় খেতে হবে। একজন পূর্ন বয়স্ক লোকের জন্য ৬-৮ গ্লাস পানি প্রতিদিন পান
করতে হবে।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান :-
পাইলস বা অর্শে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কার্যকারিতা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সন্দেহাতীতভাবে দৃঢ়তার সাথে প্রমানিত হয়ে আসছে। কেন্ট রেপার্টরীর প্রয়োগ-সংকেতও এ
পীড়ায় প্রনিধানযোগ্য। অর্শে বহুল প্রচলিত ওষধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিশেু প্রদত্ত হল।
- শ্রম বিমুখতা ও ভোগ বিলাসিতাজনিত অর্শে নাক্স ভমিকা, সালফার, পডোফাইলাম, পালসেটিলা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে,
- কোষ্ঠকাঠিন্য হেতু অর্শে ইস্কিউলাস, নাক্স, সালফার,কলিনসোনিয়া ও কার্বোভেজ
- গর্ভাবস্থায় অর্শে- কলিনসোনিয়া, ইস্কুলাস, নাক্স ভমিকা,হ্যামামেলিস, অ্যাসিড মিউর, অ্যালো,
- রক্তস্রাবী অর্শে- কলিনসোনিয়া, ইগ্লোসিয়া, র্যাটানহিয়া,হ্যামামেলিস, পিওনিয়া, এব্রোটেনাম, সালফার, ক্যাপসিকাম, ইস্কুইলাস-গ্ল্যাবরা, এসিড নাইট্রিক,তমন কার্ব।
- অস্রাবী অর্শে- আর্সেনিক এল্ব, একোনাইট ন্যাপ, ইস্কুইলাস হিপ, এসিড মিউর, এমন মিউর,প্লান্টেগো, ক্যালিকার্ব।
- আমস্রাবী অর্শে- এন্টিম ক্রুড, হিসার সালফ, লাইকোপডিয়াম সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- বি. দ্র. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষধ সেবন উচিত নয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন