স্তনে ব্যথা কেন হয়?

১. ফাইব্রোএডিনোসিস এখানে হরমোনজনিত কারণে ব্রেস্ট পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটে এবং ছোট ছোট চাকা (নডিউল) ও সিস্টের সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা হয়। ২. মেস্টাইটিস/স্তনের প্রদাহ স্তনে প্রদাহ বা ইনফ্লেমশনকে মেস্টাইটিস বলে। এটা সাধারণত বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়ার সময় হয়ে থাকে অর্থাৎ ব্রেস্ট ফিড মায়ের হয়ে থাকে। এখানে ব্যথার সঙ্গে জ্বর ও ক্ষুধামন্দা থাকে। ৩. স্তনে এবসেস বা ফোঁড়া ব্রেস্ট প্রচ- ব্যথা হয় ও জ্বর হয় এবং স্তনের চামড়া লাল হয়ে যায়। অপারেশন এ ক্ষেত্রে জরুরি। ৪. স্তনে ক্রনিক ইনফেকশন যেমন টিবি, একটি নোমাইকোসিস ইত্যাদি অসুখ হলেও ব্যথা হতে পারে। ৫. স্তন ছাড়া চেস্ট ওয়ালের অসুখের জন্য স্তনে ব্যথা হতে পারে। ৬. স্তনে টিউমার বা ক্যান্সার হলেও ব্রেস্ট পেইন হতে পারে। ৭. মানসিক অবসাদ স্তন ও চেস্ট ওয়াল ছাড়া মানসিক অবসাদগ্রস্ততার কারণেও স্তনে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় মানসিক সাহায্য বা সাপোর্ট জরুরি। রোগ নির্ণয় : ভালোভাবে ইতিহাস নেয়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে স্তনের ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় সম্ভব। রোগীর কাছে জানতে হবে ক. স্তন ব্যথার মাসিক চক্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বা মাসিকচক্র সম্পর্কহীন। মাসিক চক্রযুক্ত স্তনের ব্যথার ক্ষেত্রে ব্রেস্টে ব্যথাপূর্ণ ছোট ছোট চাকা ও সিস্ট থাকে এবং স্তন ভারী অনুভূত হয়। এ পরিবর্তন ব্রেস্টের বাইর ও উপরিভাগে ঘটে থাকে। এই পরিবর্তন হরমোনজনিত কারণে হয়ে থাকে। মাসিক সম্পর্কহীন ক. স্তন ব্যথা সাধারণত স্তনের প্রদাহ বা ফোঁড়ার জন্য হতে পারে। খ. মা ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছেন কিনা জানতে হবে। এ সময় স্তনে প্রদাহ ও ফোঁড়া হয়ে থাকে। গ. স্তন ব্যথার সঙ্গে জ্বর, ক্ষুধামন্দা, শরীর ব্যথা, ওজন হ্রাস আছে কিনা? ঘ. স্তনে কোনো চাকা আছে কিনা? ঙ. স্তনের আকার বা সাইজের পরিবর্তন হয়েছে কিনা। এমনটি সাধারণত ব্রেস্ট টিউমার বা ক্যান্সারে ঘটে থাকে। চ. স্তনের চামড়ার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা? যেমন চামড়া লাল হয়ে যাওয়া, কমলার খোসার মতো ডিম্পলিং দেখা যাওয়া (ব্রেস্ট ক্যান্সার)। ছ. নিপল ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা নিপল ডিসচার্জ হওয়া। এটা স্তনের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। নিপল ভেতরে ঢুকে যায় ক্যান্সার বা জন্মগতভাবে। নিপল ডিসচার্জ-রক্ত পুঁজ সাদা পানির মতো কিংবা মিল্ক ইত্যাদি ঝরতে পারে। বিভিন্ন রোগে নিপল ডিসচার্জ হতে পারে। জ. বগলে ও নেকে চাকা আছে কিনা জানা জরুরি। ক্যান্সার বা প্রদাহ হলে এসব গ্লান্ড ফুলতে পারে। ঝ. ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস, কাশি, বোন পেইন, জন্ডিস ইত্যাদি আছে কিনা জানতে হবে। স্তন ক্যান্সারে এমনটি হতে পারে। ইনভেস্টিগেশন কনফার্ম ডায়াগনসিসের জন্য প্রয়োজন যেমন : মেমোগ্রাম : নিপল ডিসচার্জ পরীক্ষা করা চাকার কষ (ঋঘঅঈ) বায়োপসি করা ইত্যাদি। চিকিৎসা : ১. প্রথমেই স্তন ক্যান্সার নয় নিশ্চিত হতে হবে। ২. মাসিক সম্পর্কযুক্ত হলে -্েব্রস্ট সাপোর্ট (ব্রা পরিধান করা) - ব্রমোক্সিপটিন বা - ডেনাজোল বা - টেমক্সিফেন খেতে হবে - ইভিনিং প্রিমরোজ ওয়েল টেবলেট খতে হবে। রোগীকে এ মর্মে আশ্বস্ত করতে হবে যে এটা ক্যান্সার নয় বরং সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যাবে। ৩. স্তনে সিস্ট হলে এসপিরেশন করতে হবে। ৪. স্তনে চাকা হলে অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হবে। ৫. ব্রেস্ট ফোঁড়া হলে অপারেশন করতে হবে। ৬. ব্রেস্টে কিছু না পাওয়া গেলে মানসিক সাপোর্ট অত্যন্ত জরুরি। ব্রেস্টে ব্যথা হলে সঠিক রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার জন্য সার্জনকে দেখান। টিউমার হলো দেহ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এটা কখনো Benine বা অক্ষতিকর আবার কখনো Malignant বা ক্যান্সার রূপে দেখা দেয়। প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে পুরনো কোষ ধ্বংস হয়ে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন কোষ তৈরি হয়। কোনো কারণে কোষের বিভাজন ও ধ্বংসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত হলে টিউমার তৈরি হয়।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ